ফের ব্লগার হত্যা: আমরা সন্ত্রাসীদের করুণায় বেঁচে আছি!

নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যা হবার খবরটি আমি খানিকটা পরে পেয়েছি। আমার এক বন্ধু রাত্র দশটার দিকে ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানানোর পরে আমি আমার পরিচিত এক ব্লগারকে ফোন দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খানিকটা বিস্তারিত জানতে পারি। বোয়ান থেকে আমাকে যে মেসেজ দেওয়া হয়েছিল সেটিও আমি পড়তে পারিনি। খুব ব্যস্ত থাকায় মোবাইলই ধরতে পারিনি। ব্লগে আমার লেখালেখির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কিন্তু নিজেরা লেখালেখি করে না এমন অনেক বন্ধুর কাছ থেকেই ফোন পেয়েছি। তাদের একটাই অনুরোধ, আমি যেন কোনভাবেই ব্লগে কিছু না লিখি। বিদেশ প্রবাসী এক সুহৃদ বন্ধুর সাথে এ বিষয়ে আমার যে কথোপকথন হয়েছে তা মোটামুটি এরকম-

- দোস্ত তুই আর ব্লগে লেখালেখি করিস না। দেশের যে অবস্থা চলছে তাতে তোকেও মেরে ফেলবে। তুই আমাদের বন্ধুকুলের শিরোমণি। তোরমত বন্ধুকে আমরা হারাতে চাই না।

- আমি তো দোস্ত ধর্ম-কর্ম নিয়ে কিছু লিখি না। ওগুলো নিয়ে কপচা-কপচি করতে এখন আর আমার ভাল লাগে না, আজাইরা সময় নষ্ট মনে হয়। এ সম্পর্কে আমার যা বলার তা আমি আমার দুটি গ্রন্থ ‘মনোদৈহিক’ এবং ‘বিবাহার্থী’তে বলে দিয়েছি। ব্লগ বা অনলাইনে বলারমত আর কিছু অবশিষ্ট নাই।

- সেটা ঠিক আছে, কিন্তু দেখ যে সমস্ত ব্লগারকে হত্যা করা হচ্ছে তারা সবাই কিন্তু ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করেনি। ‘ব্লগার’ নামটাই হচ্ছে কাল। এই সিলটা মেরে দিয়ে মূলত যুক্তিশীল প্রতিবাদী লেখকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

- তোর সাথে সহমত পোষণ করেই বলি- ব্লগ আছে বলেই অনেকেই লেখালেখির সুযোগ পাচ্ছে। প্রচলিত প্রিন্ট মিডিয়ার সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে অনেকেই তাদের মেধা ব্লগে লিখে প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে।  এতে একজন ব্লগার যেমন লেখার আনন্দ পাচ্ছেন, তেমনি একটা বৃহৎ পাঠকগোষ্ঠীও বিষয়গুলি জানতে পারছে। আমার ক্ষেত্রেই ধর- আমি ব্লগে সাড়ে তিন শ’রও বেশি লেখা লিখেছি। এর মধ্যে কতগুলি সিরিজ আছে যার অনেক পর্বের পাঠক সংখ্যা পাঁচ থেকে দশ হাজার। উল্লেখযোগ্য সিরিজগুলির মধ্যে কয়েকটির নাম বলি; মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ‘আমার কষ্টের সেইসব দিনগুলি’, বাংলা বানান নিয়ে লেখা ‘শুদ্ধ বানান রীতি’, কবিতা নিয়ে লেখা ‘ছড়া, ছন্দ, পদ্ম, কবিতা’ – এগুলোকে কি খারাপ বলবি? এছাড়া আরও অনেক পোস্ট আছে যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- বর্তমানে ‘সমকামিতা’ নামে আমার একটি পরিশ্রমী সিরিজ চলছে। এটিও আমি পরে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করব।

- দেখ বন্ধু তোর কথা আমি বুঝতে পারছি। তুই না বললেও আমি বিষয়টা বুঝি। কিন্তু যারা হত্যা করছে তারা তো বুঝবে না। আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা কিন্তু দেশ ছেড়ে বাইরে আসতে চাইনি।  নিজের দেশ ছেড়ে কেউ বাইরে আসতে চায় বলেও মনে হয় না। আমাদের যে যোগ্যতা আছে তাতে দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকি না কেন খুব ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারবো। দেশের বাইরে আসার মূল কারণ, পাবলিক সিকিউরিটি। বিদেশে বসবাস করে জীবনের এই নিশ্চয়তাটুকু অন্তত পাচ্ছি। এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু তারপরেও মানুষ হিসেবে যে কতগুলি অধিকার একজন মানুষের প্রাপ্য তা এখানে পাচ্ছি, বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও বাংলাদেশে বসবাস করে যা পাইনি, তোরাও এখন পাচ্ছিস না। তোকে বোঝানোর কিছু নাই। তুই বিদেশে বসবাসের সুযোগই তো নিলি না।  

আমি কখনওই দেশের বাইরে বসবাস করার পক্ষপাতী নই। সুযোগ থাকার পরেও আমি সে সুযোগ গ্রহণও করিনি। এখন বয়স হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার এমন চরম অবনত অবস্থা দেখে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। আমারমত নির্মোহ গোছের ব্যক্তি, যে দেশের মাটির মধ্যে শেকড় গুজে, উটপাখির বালিতে মাথা গুজে পড়ে থাকারমত থেকে মরতেও প্রস্তুত সেই মানুষটিও আজ- কেন দেশ ছেড়ে গেলাম না সেই হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।

কি হচ্ছে দেশে! ভাই ভাইকে মারছে, পুত্র পিতাকে মারছে, মা সন্তানকে মারছে, সন্তান মাকে মারছে, ক্ষমতাবান ক্ষমতাহীনকে মারছে, স্বপক্ষের রাজনৈতিক কর্মী স্বপক্ষের রাজনৈতিক কর্মীকে মারছে, বিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মী বিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মীকে মারছে, মৌলবাদীরা মুক্তমনা ও যুক্তিবাদীদেরকে মারছে!   প্রতিদিনই অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর। এ যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। এটি কি আসলে কল্পনাযোগ্য কোন বিষয়! অথচ এ বাস্তবতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি।

হাল আমলের অনেক হামলা ও খুন-খারাবির মধ্য থেকে যদি শুধুমাত্র আলোচিত ব্লগারদের উপরে হামলা ও তাদের হত্যার বিষয়টিকে আলাদা করি তাহলে ভয়াবহ একটি চিত্র দেখতে পাই। শক্তিশালী লেখালেখির জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে  হুমায়ুন আজাদকে খুন করা হয়। এর পরে একের পর এক  চলতে থাকে হামলা-

১৫ জানুয়ারি,২০১৩ - ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন
১৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ - ব্লগার রাজীব হায়দার
৯ এপ্রিল, ২০১৩ - আরিফ রায়হান দীপ
২৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৫ - ব্লগার অভিজিৎ রায়
৩০ মার্চ,২০১৫ - ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু
১২ মে,২০১৫ - ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ
৭ আগস্ট, ২০১৫ - ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল)

এ তালিকার এখানেই শেষ নয়। আগামীতে এ তালিকা আরও বড় হবে এবং সেখানে আপনাদেরটা লিখব আমি অথবা আমারটা লিখবেন আপনাদের মধ্যে কেউ না কেউ।

আমার মনে হয়েছে ব্লগার হত্যার বিষয়গুলিতে নিজেকে জড়ানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ  খানিকটা নিম্পৃহ। একটি বিষয়কে আমলে নিতে হবে যে, যারা নাস্তিক ট্যাগ লাগিয়ে ব্লগারদেরকে একের পর এক হত্যা করছে তাদের দৃষ্টিতে কিন্তু আওয়ামী লীগও নাস্তিক। আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের প্রচুর নেতা কর্মীও এসব খুনিদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী দল না হয়ে দুর্বল দল হলে এভাবে গণহারে তাদেরকে হত্যা করা হবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যে সমস্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে সে সমস্ত নির্বাচনের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।

হাল আমলে এসব খুনি-চক্র কৌশলগতভাবেই প্রথমে মুক্তচিন্তা বিষয়ক লেখকদেরকে নাস্তিক ট্যাগ দিচ্ছে। বিষয়টির স্পর্শকাতর দিকটি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগও এ সকল লেখকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই দূরে থাকছে। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় বৃহৎ ভোট ব্যাঙ্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান বিশ্লেষণ করলে মনে হয় আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানটিই যৌক্তিক। আপাত: দৃষ্টিতে মনে হয় আওয়ামী লীগ সঠিক কৌশলই গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে সুদূর বিবেচনায় দেখা যাবে এটি আসলে আওয়ামী লীগের ক্ষতিই বয়ে আনবে।

হত্যাকাণ্ডগুলি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই দেখা যায়- মুক্তমনের লেখক ও আওয়ামী লীগ এ দুটো শক্তিকে এভাবে পৃথক করে ফেলানোর বিষয়টি খুনি-চক্রের পরিকল্পনারই অংশ। এভাবে পৃথক করার কৌশল গ্রহণ করে, তাতে সাফল্য পাবার পরেই তারা মহাসমারোহে তাদের খুন-খারাবী-যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিজ আকারে চলছে এ হত্যাযজ্ঞ। একটিরও প্রত্যাশিত বিচার হয়নি।

একটা বিষয়কে আমলে নিতে হবে যে, লেখা-লেখির বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের থেকে এসব লেখকদের লেখনী অনেক বেশি সরব। কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি এদের লেখা মূলত আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করে। ফলে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের জন্যও এদের তথ্যসমৃদ্ধ লেখনী পাথেয় হিসেবে কাজ করে। এদেরকে হত্যা করতে পারলে অনলাইন জগতটা খুনিদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বর্তমান বাস্তবতায় সেটি অনেক বড় একটি বিজয়।

সুতরাং খুনি-চক্রের পণ, এদেরকে হত্যা করতে হবে। এটি অন্তত স্পষ্ট যে, এ খুনি-চক্রের উদ্দেশ্য কোন ভাবেই ধর্ম রক্ষা নয়, আওয়ামী লীগ নিধন। একাত্তর সালেও এভাবে একেকটা ট্যাগ লাগিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বার্থসিদ্ধির কৌশল তারা গ্রহণ করেছিল কিন্তু সফল হতে পারেনি। সে সময়ে তারা প্রচার করেছিল- যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে তারা কাফের, কাফের বলে মুক্তিযোদ্ধাদের বউ তালাক হয়ে গেছে, যে পরিবার থেকে মুক্তিযুদ্ধে গেছে সে পরিবারের লোকজনকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো কি তারা ধর্ম রক্ষার জন্যে করেছিল? না, তারা করেছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে নিজেরা পাকাপোক্তভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার জন্য।

 নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে মুক্তমনের মানুষদেরকে হত্যা করাও ঠিক তেমন একটি কৌশল, ষড়যন্ত্রও বটে। সে সময়ে যেমন সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের সকল সহশক্তিকে ধারণ করে দৃঢ়ভাবে পথ চলে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, সে বিজয়কে পরিপূর্ণ রূপ দিতে এখনও সেভাবেই সকলকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার, আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য এটি খুনি-চক্রের একটি বিভাজন-মূলক কৌশল। এ কৌশলের কাছে হেরে যাওয়া মানে সমূহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা।

হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়াটা একটা স্টাইলে পরিণত হয়েছে। বাংলা সিনেমার কাহিনীগুলি যেমন নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা, একটু দেখলে বাকীটা বলে দেওয়া যায়- হত্যা সংক্রান্ত মামলাগুলিতেও তেমনি আইন ও বিচার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির ভূমিকার বিষয়টি ছকে বাঁধা। মিডিয়ার হৈ চৈ, কিছু মানুষের রাজপথে স্লোগান, টক শোতে আলোচনা, রাজনীতিবিদদের কঠোর হুসিয়ারী, পুলিশের চিরুনি অভিযান, সন্দেহজনক কয়েকজনকে গ্রেফতার- এর পরে পুরো বিষয়টিই ডিপ-ফ্রিজে চলে যায়। সেখানে প্রক্রিয়াগুলি প্রচণ্ড হিমে একেবারে জনম-জমা জমে বরফ-খণ্ড হয়ে লোক চক্ষুর অগোচরে অবস্থান করে। কোন সুরাহা হয় না। নতুন হত্যাকাণ্ড চলে আসে, আগেরটা চাপা পড়ে যায়, আবার শুরু হয় হৈ চৈ।

ঘটনাগুলি লোক চক্ষুর অগোচরে অবস্থান করলেও তা একেবারে থেমে থাকে না। ওখানে চলে বাণিজ্য। বাংলাদেশের শতকরা নব্বইটিরও বেশি হত্যা মামলার রফা হয় টাকার বিনিময়ে। পুলিশ ও বিচার বিভাগকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ হয় মামলা। হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলি অনেক স্পর্শকাতর হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেটি মোটেও স্পর্শকাতর বিষয় নয়। তাদের কাছে এটি বাণিজ্য। ফলে বাদী পক্ষের লোকজন উকিলকে, মুহুরিকে, থানায় টাকা দিতে দিতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। প্রাত্যহিক কাজকর্ম বাদ দিয়ে নিত্য থানায়, জেলখানায়, কোর্টে হাজিরা দেওয়া হয়ে পড়ে অসম্ভব। যে চলে গেছে সে যায়, বাকীদের বাঁচানোর জন্যে শেষ পর্যন্ত বাদীপক্ষ বাধ্য হয়ে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে। আর সরকার-বাদী মামলা হলে তো পাবলিক প্রসিকিউটরের পোয়া বারো। সব ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে রফা হয়।

পোস্টিংভেদে ওসি থেকে উপরমহল পর্যন্ত একেকজন পুলিশ অফিসারের মাসিক আয় মাসে তিন লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে এক কোটি টাকারও বেশি। ভাল মানুষ পুলিশকে যেচে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে না, খারাপ মানুষদের খারাপ কাজের সহযোগিতা থেকে টাকা আসে। সুতরাং হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে কি করে! আবার পুলিশ চাইলেও অনেক সময়ে বিচার কাজ সম্পন্ন হয় না। পুলিশের উপরে আছে বিচার বিভাগের বিষয়-আসয় এবং ভানুমতীর খেল।

যেভাবে চলছে তাতে মনে হয়, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং এ বিষয়ক করুণ কাহিনীগুলি বাংলা সিনেমা স্টাইলে চলতেই থাকবে। সন্ত্রাসী-খুনিরা উল্লাস করে আরো বেশি বেশি করে হত্যা করতে থাকবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বাণিজ্য বাড়তে থাকবে। ঘরে ঘরে বাড়তেই থাকবে কান্নার রোল। তাতে কি এসে যায়! বিচার যেহেতু হয় না, সুতরাং আমাকে-আপনাকে যে আজও হত্যা করা হচ্ছে না- তা বোধ হয় খুনির করুণা। ওরা চাইলেই তো ওদের হাতে আমাদের মৃত্যু হতে পারে, ওদের হাতের মুঠোয় আমাদের জীবন। জীবনের জন্য নিজ ঘরই যেখানে অনিরাপদ সেখানে আর কি-ই বা বলার থাকতে পারে! আমরা গা বাঁচিয়ে চলছি। সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি, লেখালেখি না করার পরার্ম দিচ্ছি, কোন ঝৈ-ঝামেলায় না যাবার জন্য উপদেশ দিচ্ছি। এভাবে কি বাঁচা যাবে?  

কবি নবারুণ ভট্টাচার্য এর লেখা ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার কতোগুলি চরণ খুব মনে পড়ছে-

যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায়
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি-

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না

আমাকে হত্যা করলে
বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব
আমার বিনাশ নেই-
বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব
আমার বিনাশ নেই-
সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন
মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।
পরিশেষে বলি, আমরা কেউ-ই নিরাপদ নই। যথাযথ প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হলে এ দুষ্ট খড়গ কাউকেই রেহাই দেবে না।
First