গল্পকণিকা : নিষ্কৃতি



ওদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক নেই, কিন্তু বোধটা রক্তসম্পর্কের। ব্যাপারটা অন্তর্যামীয়, কিংবা মনোসংক্রামক, এমনকি দুর্বোধ্যও।
ওরা একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা, যাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ছিল, ছিল তীব্র কামাকর্ষণ। কিন্তু কী এক কারণে ছেলেটির মনে এক অস্বস্তি দানা বেঁধে ওঠে; ছোঁয়াচে ব্যাধির মতো মেয়েটাও অনুরূপ অনানুভূতপূর্ব যন্ত্রণায় কাতর হতে থাকে।

একদিন মেয়েটি মুখ খুললো। ইতস্তত করে বললো, মনে হয় আমরা পাপ করছি।
গাঢ় চোখে একটা শুভ্র গোলাপের দিকে তাকিয়ে ছিল ছেলেটি। ফুলকে ছুঁয়ে দিতে নেই, বোঁটা ছিঁড়তে নেই, ওটা নষ্ট হয়ে মরে যায়। সে যতবার প্রেমিকার কাছ ঘেঁষে বসেছে, মনে হয়েছে এ তার প্রেমিকা নয়, একটা নির্মল, নিষ্কাম ফুল- আমৃত্যু অনাঘ্রাত থেকে পবিত্র গন্ধ ছড়ানোই যার ব্রত।
ছেলেটি সংক্রমিত; কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ। সে মেয়েটির দিকে তাকায়। তারপর চোখ মাটিতে নামিয়ে এনে বলে- আমিও অনেকদিন ধরে কথাটা বলতে চেয়েছি, কিন্তু মুখ আটকে গেছে।
- আমাদের ব্রেকাপ করা উচিত।
- যতবার তোকে চুমু খেয়েছি, মনে হয়েছে তুই আমার প্রেমিকা নস। আমার বোন।
- এমনটা আমারও হয়। তোর চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় তুই আমার আদরের ছোটো ভাই।
- ভাইবোনের মতো ফিলিংস। ভাইবোনে এসব হয় না। চল, আমরা হারিয়ে যাই- যার যার পথে।

তারপর মেয়েটি উদাস চোখে চারদিকে তাকালো। চোখ ফেটে কয়েক ফোঁটা পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলো।
ছেলেটাও ফ্যাল ফ্যাল করে কাঁদছে। তারপর দুহাতে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে ফিশফিশিয়ে বললো, ভালো থাকিস বোন। আর যেন দেখা না হয়।
এরপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
এরপর দুজনে দুদিকের পথে পা বাড়ালো।
কিছুদূর যেয়ে, যেতে যেতে দুজনে ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালো। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। ওদের বুকে অতীতের একদঙ্গল দুঃখ আর অনুশোচনা; কিন্তু তার চেয়েও অনেক গভীর স্বস্তি আর প্রশান্তি। সব দ্বিধা ছিঁড়ে-ফেরে ছুঁড়ে ফেলে ওরা আজ নিজেদের নিষ্কৃতি দিয়েছে।

রক্তসম্পর্কে সেক্স হয় না, অবৈধ এবং পাপ; এমনকি রক্তসম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্কের বোধটা রক্তের টানের মতো হলে সম্পর্কের দাম দিতে হয়। এটাই মাহাত্ম্য।

এ দুটো ছেলেমেয়ে এদ্দিন প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল। প্রেমিক-প্রেমিকা হিসাবে ওদের আজ ব্রেকআপ হলো।

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫